মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের ড্রেসকোড পরিবর্তন করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা। আগে মেয়েদের ড্রেসকোডে মাথায় স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও নতুন প্রণীত ড্রেসকোডে সেখানে স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে ছেলেদের মাথায় টুপি ব্যবহারকেও অঘোষিতভাবে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
শুধু শিক্ষার্থীই নয়, শিক্ষকদের মধ্যেও আগে যারা পাঞ্জাবী পড়ে স্কুলে আসতেন তাদেরকে এখন পাঞ্জাবী পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। তবে কেউ পাঞ্জাবী পড়লেও পাঞ্জাবীর উপরে আলাদাভাবে কটি পড়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন তারা ড্রেসকোডে কোনো পরিবর্তন আনেননি। মেয়েদের ওড়না বা স্কার্ফ ব্যবহার এবং ছেলেদের টুপি ব্যবহারকে পুরোপুরি নিষেধও করা হয়নি।
তবে এই ড্রেসগুলোকে শুধু ঐচ্ছিক করা হয়েছে মাত্র।
মঙ্গলবার দুপুরে মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান ফটকে গিয়ে দেখা গেলো স্কুলের বালক শাখার ছুটি হয়েছে। দলে দলে বের হয়ে আসছে ছেলেরা। তবে অনেক শিক্ষার্থীর মাথায় টুপি নেই। আগে যেখানে প্রায় প্রতিটি বালকের মাথায় টুপি ব্যবহার বাধ্যতামূলক থাকতো মঙ্গলবারের চিত্র ছিল সম্পুর্ণ বিপরীত। নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি সিদ্ধান্তে ড্রেসকোডে পরিবর্তন এনে ছেলেদের টুপি ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার অভিযোগ করেছেন অনেক অভিভাবক। প্রথম সারির দাবিদার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির মতিঝিলে প্রধান শাখা ছাড়াও মুগদা ও বনশ্রীতেও আরো দু’টি শাখা রয়েছে।
দুপুর দুইটার একটু আগে মূল স্কুল ভবনের ভেতরের মাঠে গিয়ে দেখা গেল বেশ কিছু মেয়ে স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে মাঠে খেলাধুলা করছে। অনেকে আবার স্কাউটিং এর অনুশীলন করছে।
অনেক মেয়েরা মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে সেই খেলা দেখছে। কিন্তু কোনো একজন শিক্ষার্থীর শরীরে বড় ওড়না বা স্কার্ফ পরিহিত নেই। দু’একজনের সাথে সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বলতে চাইলে তারা স্কুলের ড্রেসের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হলো না।
স্কুলের বাইরে রাস্তার পাশের একটি বইয়ের দোকানের বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানালেন, আগে বালক বা বালিকা শাখার যে কোনো শিফটের ছুটি হলে স্কুলের বাইরে অন্যরকম একটি দৃশ্যের অবতারণা হতো। যে কেউ স্কুলের ড্রেস দেখলেই সহজে বুঝতে পারতো আইডিয়াল স্কুল ছুটি হয়েছে। কিন্তু এখন দেখুন, অনেক ছেলেদের মাথাতেই টুপি দেখা যায় না।
একই ভাবে তিনি জানালেন, নতুন ড্রেসকোড দেয়ার পর মেয়েদের মাথায়ও এখন আর আগের সেই স্কার্ফও দেখা যায় না।
পেশায় আইনজীবী এম এস রহমান নামের এক অভিভাবক নয়া দিগন্তের প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে স্কুলে গিয়ে আমরা শিক্ষকদের কাছে সরাসরি কোনো অভিযোগ করতে পারি না। এই স্কুলের মূল শাখায় (মতিঝিলে) আমার ছেলে ও মেয়ে পড়ালেখা করছে। আগের ড্রেসকোড পরিবর্তন করায় আমি ব্যক্তিগতভাবে মর্মাহত হয়েছি। ইসলামী ভাবধারায় ভবিষ্যতে সন্তানদের গড়ে তোলার আশা নিয়ে এখানে সন্তানদের ভর্তি করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, স্কুল কর্তৃপক্ষের এমন স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সেই আশাও পূরণ হবে না।
রেশনা নামের এক মা অভিযোগ করেন আমার মেয়ে আগে যেখানে নিয়মিত গায়ে ওড়না জড়িয়ে আর মাথায় স্কার্ফ বেঁধে স্কুলে আসতো এখন সে শুধু একটি সাধারণ ওড়না ক্রস আকারে শরীরে দিয়ে স্কুলে আসছে। কোনো কোনো শিক্ষক নাকি আমার মেয়েকে আগের ড্রেস পড়ে স্কুলে আসতে নিষেধ করেছেন।আগে তো’ মেয়েদের বড় ওড়না ব্যবহার আবশ্যিক ছিল, তাহলে এখন কেন এটাকে ঐচ্ছিক করলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না; বিষয়টি এরকম নয়। একথা ঠিক যে, আগে মেয়েরা একটি বড় ওড়না ব্যবহার করতো কিন্তু সব মেয়েই কিন্তু ভেতরে ক্রস আকারে ডেসের সাথে মিল রেখে বেল্ট দিয়ে একটি ওড়না ব্যবহার করতো। এখন উপরের বড় ওড়নাটাকেই ঐচ্ছিক করা হয়েছে। ওই বড় ওড়নাটা অনেকে সুন্দর করে পড়ে স্কুলে আসতো না। তাই আমরা বলেছি সুন্দর করে ওড়না পড়তে হবে। যেনতেন বা অগোছালোভাবে ওই ওড়না পড়া যাবে না। কাজেই ওড়নাতো একটি আছেই। আর যে কথাটি বলা হচ্ছে ওড়না নেই এটা আসলে সঠিক না।